Recently Lyrics Updated

গানঃ আমার সোনার বাংলা 
কথাঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সুরঃ গগন হরকরা

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥

কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥

তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥

ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥

ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে—
দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে—
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব'লে গলার ফাঁসি
অনেক কথা যাও যে ব'লে কোনো কথা না বলি ।
তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি ।।
যে আছে মম গভীর প্রাণে ভেদিবে তারে হাসির বাণে,
চকিতে চাহ মুখের পানে তুমি যে কুতূহলী ।
তোমারে তাই এড়াতে চাই, ফিরিয়া যাই চলি ।।
আমার চোখে যে চাওয়াখানি ধোওয়া সে আঁখিলোরে-
তোমারে আমি দেখিতে পাই, তুমি না পাও মোরে ।
তোমার মনে কুয়াশা আছে, আপনি ঢাকা আপন-কাছে-
নিজের অগোচরেই পাছে আমারে যাও ছলি
তোমারে তাই এড়াতে চাই, ফিরিয়া যাই চলি ।।
আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই - 
লুকোচুরি খেলা ।
নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই -
লুকোচুরি খেলা ।।
আজ ভ্রমর ভোলে মধু খেতে উড়ে বেড়ায় আলোয়-মেতে,
আজ কিসের তরে নদীর চরে চখা-চখীর মেলা ।
নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই -
লুকোচুরি খেলা ।।
ও রে যাব না আজ ঘরে রে ভাই, যাব না আজ ঘরে ।
ওরে, আকাশ ভেঙে বাহিরকে আজ নেবরে লুট ক'রে-
যাব না আর ঘরে ।
যেন জোয়ার-জলে ফেনার রাশি বাতাসে আজ ছুটছে হাসি,
আজ বিনা কাজে বাজিয়ে বাঁশি কাটবে সকল বেলা ।
নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই -


লুকোচুরি খেলা ।।
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে
জানি নে, জানি নে
কিছুতেই কেন যে মন লাগে না ।।

এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে
উদ্ভ্রান্ত মেঘে... 
মন চায়... মন চায়...
ঐ বলাকার পথখানি নিতে চিনে ।।

মেঘমল্লারে সারা দিনমান
বাজে ঝরনার গান ।

মন হারাবার আজি বেলা
পথ ভুলিবার খেলা
মন চায় …মন চায় …
হৃদয় জড়াতে কারো চির -ঋণে

আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে . . .

জানি নে জানি নে … 


কিছুতে কেন যে মন লাগে না। 
গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ

গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ 
আমার মন ভুলায় রে,
গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ 
আমার মন ভুলায় রে।

ওরে কার পানে মন হাত বাড়িয়ে 
ওরে কার পানে মন হাত বাড়িয়ে 
লুটিয়ে যায় ধুলায় রে
আমার মন ভুলায় রে।

গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ 
আমার মন ভুলায় রে,
গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ 
আমার মন ভুলায় রে।

ও যে আমায় ঘরের বাহির করে,   
পায়ে-পায়ে পায়ে ধরে 
মরি হায় হায় রে,
ও যে আমায় ঘরের বাহির করে,   
পায়ে-পায়ে পায়ে ধরে 
মরি হায় হায় রে।

ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে 
ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে, 
যায় রে কোন্ চুলায় রে
আমার মন ভুলায় রে।

ও যে কোন্ বাঁকে কী ধন দেখাবে,   
কোনখানে কী দায় ঠেকাবে–
কোন্ বাঁকে কী ধন দেখাবে,   
কোনখানে কী দায় ঠেকাবে। 
কোথায় গিয়ে শেষ মেলে যে
কোথায় গিয়ে শেষ মেলে যে,  
ভেবেই না কুলায় রে
আমার মন ভুলায় রে।

গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ 
আমার মন ভুলায় রে,
গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ 
আমার মন ভুলায় রে।
এসো হে বৈশাখ

এসো হে বৈশাখ, এসো এসো। 
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো। 
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে, 
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক। 
এসো এসো...
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো 
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো 

যাক পুরাতন স্মৃতি
যাক ভুলে যাওয়া গীতি
যাক অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক
যাক যাক
এসো এসো...
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো 

মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, 
অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা। 
মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, 
অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা। 
রসের আবেশ রাশি, শুষ্ক করি দাও আসি।  
আনো আনো, আনো তব প্রলয়ের শাঁখ। 
আনো আনো, আনো তব প্রলয়ের শাঁখ। 
মায়ার কুঁজঝটি জাল যাক দূরে, যাক যাক যাক। 
এসো এসো...

এসো হে বৈশাখ, এসো এসো 
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে, 
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক। 
এসো এসো...
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো